Barishaler Times

Header
collapse
...
Home / সারা দেশ / বরিশাল / মৌসুমি জেলেদের ‘গোপন’ প্রস্তুতি মধ্যরাত থেকে নদীতে ২২ দিনের ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা

মৌসুমি জেলেদের ‘গোপন’ প্রস্তুতি মধ্যরাত থেকে নদীতে ২২ দিনের ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা

2025-10-03  বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি  290 views

মধ্যরাত থেকে শনিবার শুরু হচ্ছে ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে। পদ্মা—মেঘনার ৮২ কিলোমিটার অংশ এই সময় ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে থাকবে। এ সময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।৪অক্টোবর রাত থেকে মোট ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ শিকার করতে নির্জন চরাঞ্চলে গিয়ে অবস্থান করছেন মৌসুমি জেলেরা।প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে গোপনে কীর্তনখোলা,আড়িয়াল খাঁ,কালাবদর ও মেঘনার বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি জেলেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে।প্রায় শতাধিক মৌসুমি জেলে গোপনে মাছ ধরার জাল ও নৌকা জোগার করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন বলে একাধিক গোপনসুত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে।তবে প্রকৃত জেলেরা বলেন যদি মৌসুমি জেলেদের অভিযান দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তাহলে আমরা যারা ১২ মাস মাছ শিকার করি তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।তারা এবার ২২দিনের অভিযানে ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছে মাছ শিকার যেন করতে না পারে সেই জন্য।প্রয়োজনে নদীর মনিটরিং করার জন্য নদীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারি করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পুলিশের কর্মকর্তা।

সরকারের এ অভিযান বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্ব উপকূলীয় এলাকায় চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারণা।

বরিশাল জেলা মৎস্য অফিস জানায়, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন ও অমাবস্যার পরের তিন দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান—২০২৫’ চলবে। এ অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশ নেবে।

কয়েকজন জেলে অভিযোগ করেন, বিকল্প কর্মসংস্থান বা পর্যাপ্ত সহায়তা না থাকায় তারা বাধ্য হচ্ছেন ইলিশ শিকারে নামতে। সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিএফ চাল বরাদ্দ থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলেও দাবি তাদের।

 

অন্যদিকে প্রশাসন জানিয়েছে, মা ইলিশ রক্ষায় কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে জাল—নৌকা জব্দসহ আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

এ সময় ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবারপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে, যা মোট ১৫ হাজার ৫০৩ টন চালের সমান।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার আলোকে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মৎস্যজীবীদের মতামত ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার পরামর্শের ভিত্তিতেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বরিশাল নৌ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ড্রোন দিয়ে নজর রাখা হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় তাঁরা মৎস্য পল্লিগুলোয় প্রচার এবং মৎস্যজীবী, আড়তদার ও বরফকলের মালিকদের নিয়ে সভা করেছেন। ৫৯টি ইলিশসমৃদ্ধ ইউনিয়নের টাস্কফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলায় মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে থাকবে। দুষ্কৃতকারীদের ঠেকাতে মেঘনা নদীতে নজর রাখার জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। নৌ পুলিশও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব স্থান থেকে জেলেরা নদীতে নামার চেষ্টা করবেন, সেখানে অভিযান চালাবে।

রিপন কান্তি জানান, মা ইলিশ নিধনকারীদের বিচারে ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৭৯ হাজার জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ হাজার ৫২৪ জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।

গত বছরের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পেরেছিল। এর ফলে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়, যা ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

বাজারে এবার ইলিশের দাম বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি মাঝারি আকারের (৯০০–১১০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।


Share: