ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় বিনামূল্যে বকনা বাছুর ও দেশীয় মাছের পোনা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এই মহৎ উদ্যোগ ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
দেশীয় প্রজাতির মাছ, শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাকেরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তবে অভিযোগ উঠেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাকেরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করা সাইফুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
গত ঈদুল আজহার সরকারি ছুটির মধ্যেই ব্যক্তিগত স্বার্থে বরিশালের কাশীপুর এলাকায় নিয়ে গিয়ে বাকেরগঞ্জের ৪২ জন জেলেকে বাছুর বিতরণ করেন তিনি। অথচ প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাছুর বিতরণের কাজটি সংশ্লিষ্ট উপজেলার প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই বাছুরগুলোর বেশিরভাগই ছিল রুগ্ন ও ওজনে কম। প্রতিটি বাছুরের ওজন ছিল মাত্র ৩৬ থেকে ৩৮ কেজির মধ্যে, যার বাজারমূল্য ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। অথচ সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি বাছুরের ওজন থাকা উচিত কমপক্ষে ৮০ কেজি এবং মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
এদিকে ২০ মে ২০২৫ তারিখে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রিফাত আরা মৌরি একই প্রকল্পের আওতায় আনা ৪০টি বকনা বাছুর ফেরত পাঠান—কারণ সেগুলোর ওজন কম এবং গরুগুলো ছিল রুগ্ন। কিন্তু বাকেরগঞ্জে সেই একই ধরনের গরু বিতরণ করে দেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
অভিযোগ আরও রয়েছে, ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যেই উপজেলার পাদ্রীশ্মিপুর ইউনিয়নে ৫ লাখ টাকার মাছের পোনা অবমুক্ত দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাস্তবে ওই স্থানে পোনা অবমুক্তের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
একজন সুবিধাভোগী অভিযোগ করে বলেন,জেলেদের যে গরু বা ছাগল মৎস্য অফিস থেকে দিয়েছে, তার কোনোটাই মানসম্মত না। গরুগুলো রোগা, অসুস্থ, অনেকে তো নিতে চায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন,
সব কিছুই জেলা মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে হয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, নিজের কর্মস্থল ও বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় সাইফুল ইসলাম “ধরাকে সরা জ্ঞান” করে কাজ করছেন এবং প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু পরিচালনা করছেন।
এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের দাবি, অবিলম্বে এই দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।