Barishaler Times

Header
collapse
...
Home / বাংলাদেশ / অর্থনীতি / স্বর্ণের দাম তিন বছরে দ্বিগুণ, কারণ কি শুধু বিশ্ববাজার?

স্বর্ণের দাম তিন বছরে দ্বিগুণ, কারণ কি শুধু বিশ্ববাজার?

2025-10-08  নিজস্ব প্রতিনিধি  154 views


দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) নতুন দাম ঘোষণা অনুযায়ী—২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৭২৬ টাকায়। বুধবার (৮ অক্টোবর) থেকে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি প্রতি বিক্রি হবে ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
মাত্র একদিনের ব্যবধানে প্রতি ভরিতে এক হাজার ৩৬৯ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন । এর আগে ৫ অক্টোবর ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা।বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বগতি—দুই কারণেই খুচরা বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন ২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে স্বর্ণের ভরি । তবে এই দামের সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৬ শতাংশ মজুরি যোগ হওয়ায় ক্রেতাদের জন্য এক ভরি গয়না কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় সোয়া ২ লাখ টাকার মতো । যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এতে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন, বিপাকে পড়ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।তিন বছরে ৮৩ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা বাজুসের প্রকাশিত গত তিন বছরের দামের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে স্বর্ণের দাম বেড়ে চলেছে ক্রমান্বয়ে। ২০২২ সালের ২২ আগস্ট প্রতিভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ৮৩ হাজার ২৮০ টাকা, যা ছিল সে সময় পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার আগের দিন, ২১ আগস্ট দাম ছিল ৮২ হাজার ৫৬ টাকা। এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর বাজুস নতুন মূল্য তালিকা দেয়—সেখানে ভালো মানের ২২ ক্যারেট স্বর্ণের ভরির দাম বেঁধে দেওয়া হয় ৮৪ হাজার ২১৪ টাকা।

দেশের বাজারে প্রভাব

বাংলাদেশে ২০০০ সালে ২২ ক্যারেট এক ভরি স্বর্ণের দাম ছিল মাত্র ৬,৯০০ টাকা। ২০১০ সালে তা দাঁড়ায় ৪২,১৬৫ টাকা, ২০২০ সালে প্রায় ৭০,০০০ টাকা, এবং ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো এক লাখ টাকা অতিক্রম করে। চলতি বছরের শুরুতে দাম ছিল দেড় লাখ, এখন ২ লাখ টাকার বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে।
বাজুসের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ দামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বৈশ্বিক বাজারের ওপর। আন্তর্জাতিক চাহিদা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ মজুতের ধারা বিবেচনায় এ ধরনের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়।’ তিনি বলেন, “সোনার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিক্রি কমায় কারিগররা বেকার হয়ে পড়ছেন।”

**বিলাসপণ্য হয়ে যাচ্ছে স্বর্ণ**
 

বাজারে এখন এমন অবস্থা— মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য স্বর্ণ কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এক সময় বিয়ে, উৎসব কিংবা সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণ কেনা হতো। এখন তা বিলাসপণ্যে পরিণত হয়েছে। ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার এক জুয়েলার্স মালিক বলেন, “আগে দিনে দিনে গ্রাহকরা দোকানে আসতেন গয়না বানাতে। এখন অনেকে শুধু দেখতে আসেন। ক্রেতা কমে গেছে, কিন্তু দাম বাড়ছেই।” পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে প্রায় পাঁচ দশক ধরে স্বর্ণ ব্যবসা করছেন গোবিন্দ হালদার। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার আগে গিনি স্বর্ণের দাম ছিল ভরি দেড়শত টাকা। তখনও মানুষের অভিযোগ ছিল, দাম নাগালের বাইরে। এখন তো অবস্থা আরও কঠিন।


Share: