Barishaler Times

Header
collapse
...
Home / সারা দেশ / সিলেট / দেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো গৃহহীন!

দেশে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো গৃহহীন!

2025-10-06  নিজস্ব প্রতিনিধি  125 views

বাংলাদেশের অর্থনীতি গত এক দশকে অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু এখনো সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে শহরে মানুষ আসছে কাজের খোঁজে, কিন্তু শহর তাদের জন্য ঘর দিতে পারছে না। আশ্রয়ের অভাবে তারা ফুটপাতে, অব্যবহৃত ভবনে কিংবা বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের নিরাপত্তাহীনতা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এই গৃহহীন জনগোষ্ঠী শুধু মানবিক দুর্দশার প্রতিচ্ছবি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে ঘাটতির পরিচায়ক। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান ছাড়া এই সংকট আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক এমন এক বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস-২০২৫। জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে দিবসটির সূচনা করে এবং ১৯৮৬ সাল থেকে এটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। যা প্রতি বছরের অক্টোবরের প্রথম সোমবার পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে বাসস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং বিশ্ব নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে— 'নগর সংকট মোকাবিলায় সাড়া: সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গঠন।' বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপনের দায়িত্ব পালন করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

সকালে জিয়া উদ্যান থেকে একটি র‌্যালি শুরু হয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকারি উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও নগর বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে এক হাজার ২০০ জন মানুষ বাস করছে। রাজধানী ঢাকায় এ সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে দেশের শহুরে জনসংখ্যার প্রায় ৩৫ শতাংশ এখনো বস্তি বা অনানুষ্ঠানিক বসতিতে বাস করছে। ঢাকার কড়াইল, যাত্রাবাড়ী, রায়েরবাজার, মিরপুর ও গাবতলীর মতো এলাকায় হাজারো পরিবার অস্বাস্থ্যকর, অস্বস্তিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দিনযাপন করছে। অন্যদিকে গ্রামীণ জনপদে প্রতি বছর নদীভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে গড়ে ১৫ হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারায়। তারা জীবিকার সন্ধানে শহরে চলে আসে। ফলে নগরের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয় এবং আবাসন সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে।সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প, স্বপ্ননীড় ও ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া ‘আশ্রয়ণ-২ (৪র্থ সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা ঘর দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রকল্পে ব্যয় হবে ১১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। শুধু ঘর নয়, এই প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীদের আয়ের সুযোগ সৃষ্টি, ঋণ সুবিধা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে থাকবে বলেও জানানো। তবে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের সার্বিক আবাসন সংকট নিরসনের জন্য যথেষ্ট নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে নগরায়ণ দ্রুত বাড়ছে। ১৯৬০ সালে যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করত, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৪৭ শতাংশে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বাস করবে। বর্তমানে দেশের জিডিপির প্রায় ৬৫ শতাংশই আসে নগর এলাকা থেকে। প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নতুন করে ঢাকায় আসছে। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু এই নগরায়ণ মূলত অপরিকল্পিত এবং ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে রাজধানীতে আবাসনের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মধ্যবিত্তের জন্যও ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট বা আবাসনের স্বপ্ন এখন অনেকটাই অধরা হয়ে উঠছে।জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গৃহহীনতার সংকটকে আরও গভীর করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও নদীভাঙন মানুষকে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হতে বাধ্য করছে। জাতিসংঘের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় এক কোটি ৩৩ লাখ। এরা সবাই কোনো না কোনোভাবে শহরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। ফলে আবাসন সংকটের সঙ্গে জলবায়ু সংকট ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে।

সম্প্রতি এক বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা এক বছর একটি কাজ করে দেখতে পারি, এ বছর যারা নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়েছেন- ডিসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি তাদের জায়গাতেই কীভাবে তাদের আবার পুনর্বাসন করা যায়।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বস্তিতে কোনো বসতি নয়, মানুষ যেন বস্তিবাসী না হয় সেই উদ্যোগটা আমরা নিতে পারি। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ম্যান্ডেটটা এভাবে চিন্তা করা যায় কি না— যেখানেই সমস্যা হবে সেখানেই আপনারা স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায়, স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায়, ব্যবসায়ীদের সহায়তায় সেখানেই পুনর্বাসন করুন। আমাদের বিপুল পরিমাণে খাস জমি কিন্তু দখল এবং অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এই খাস জমিগুলোতে আপনারা পার্টনারশিপের মাধ্যমে বাসস্থানের প্রকল্পগুলো করতে পারেন কি না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্থান তথা আবাসন। প্রতিটি মানুষের যথোপযুক্ত বাসস্থান পাওয়ার অধিকার জাতিসংঘের ঘোষণায় নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের সংবিধানেও বাসস্থানকে মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সব মানুষের স্বপ্ন থাকে সুন্দর একটা বাড়ি করার। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে সবাই ফেলতে চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সবারই ন্যূনতম চাওয়া একটা সুন্দর নিজস্ব ঠিকানা। নিজের একটা ঠিকানা শুধু না। নিজের একটা বাসস্থান মানুষের স্থিতিশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং ব্যক্তিত্বকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।


Share: